আলোর মনি রিপোর্ট: অন্ততকালের ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতা ঝরা বসন্ত। এখন শিমুল-পলাশের লাল আগুনের শেষ সময়। এই তো বসন্ত। দমকা হাওয়া আর পাতা ঝরার কুড়মুড়ে আওয়াজই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আনমনা ভরা বসন্ত। ঋতুর পালা বদলের সময়ের সাথে সাথে আমাদের মনের ঋতুরও পালাবদল ঘটে এই সময়ে।
এদিকে লালমনিরহাট জেলা বৃক্ষরাজীর দিকে তাকালে গাছগুলো পাতাহীন কংকাল হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বৈরী বাতাস আপনাকে আচমকাই ভালোলাগার একটা মুহূর্ত তৈরি করে দিবে, আবার হুট করেই আপনাকে বিবাগী করে তুলবে। এটাই এই ঋতুর ধরণ। পাতা ঝরার মধ্যে একটা নজরকাড়া সৌন্দর্য আছে। রয়েছে অভূতপূর্ব মায়াবী এক দৃশ্য। যা আপনাকে অন্যকোন কল্পনায় হারিয়ে নিয়ে যেতে সময় নেবে না একটুও।
এখন পাতা ঝরা কমে এসেছে। পাতা ঝরতে ঝরতে গাছগুলো পাতাহীন। গাছগুলো ফাঁকা-ফাঁকা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি ধরছে সবুজ কচি পাতা। সব পাতারই বোধ হয় এক বছরের জীবন। এই এক বছরের জীবনেই তাদের শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং বার্ধক্য কেটে যায়। আবার আগামী ফাল্গুনে তাদের দিন ফুরুবে, ঝরে পড়বে মাটিতে প্রকৃতির নিয়মে।
মাটির ওপর ঘন হয়ে পরে থাকে পাতা, খুব জোরে হাওয়া না দিলে উড়ে যায় না। এই ঝরা পাতার মধ্যে একটা উদাসী সুর আছে। বিশেষত, ওপর থেকে যখন থমকে থমকে উড়তে থাকে ঝরা পাতাগুলো তখন জন্মের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে নেমে আসে তারা ধরিত্রীর ওপর। এভাবেই জীবনের নির্মম সত্য প্রকৃতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়। গাছের শুকনো পাতা ঝরার দৃশ্য দেখে একবারও কি আমাদের অন্তিম সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয় না!
একটু ভাবলেই আমরা সবাই অনুভব করতে পারি জীবনের অন্তিম মুহূর্তের কান্নার ধ্বনি এখানেই লুকিয়ে আছে। আপন নিয়মে আমরাও একদিন ঝরে পরবো ভালোবাসার জীবন থেকে চিরতরে।
মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রাণিই আসলে প্রকৃতির নিয়মে এভাবেই ঝরে পরি আমরা। যে পাতা ছিল সবুজ, আজ সে পাতা বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। সাপের খোলসের মত গাছের ডাল থেকে ঝরে পরছে। এভাবে বোধ হয় আমাদের প্রত্যেকের জীবনও বদলে যাবে। একদিন এই ঝরাপাতার মতোই ঝরে পরবো আমারা সবাই। নির্দিষ্ট সময় থেকে এক সেকেন্ডও বেশি সময় পাবেনা কেউ। আমাদের অজান্তেই আমরা এই ঝরাপাতার মতই ঝরে পরবো একদিন।
তাই হয়ত কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এঁর ভাষায় বলাতেই হয়, “ঝরাপাতা গো, আমি তোমাদেরই দলে।”